বিশেষ প্রতিনিধি রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও):
মুক্তির ৭১ নিউজ ডট কম সহ অনেকগুলো সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ ফুটবল দলের খেলোয়াড় মোছাম্মত সাগরিকার পরিবার পাচ্ছে নতুন বাড়ী। সাগরিকা'র পরিবারকে আর অন্যের জায়গায় থাকতে হবে না। সরকারিভাবে দেয়া হবে নতুন দুই রুম বিশিষ্ট একটি বাড়ী।
এর আগে সাগরিকার বাড়িতে তাকে দেখতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান। এ সময় তার পরিবারের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে তিনি জানান, উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামে অবস্থিত সাগরিকার পরিবারের জরাজীর্ণ বাড়ী নতুন করে নির্মাণ করার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন নীতিগত সিদ্বান্ত নিয়েছে। এবিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সাগরিকার পরিবারকে নতুন করে দুই রুম বিশিষ্ট একটি বাড়ী নির্মাণ করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে রাজমিস্ত্রির সাথে কথা বলা হয়েছে বাড়ী ব্যয় নির্ধারণ করে দ্রুত বাড়ীর নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
এদিকে বাড়ী জায়গাসহ নতুন ঘর পাবার কথা শুনে খুশিতে কেদেঁ দিয়েছেন সাগিরকার বাবা চা বিক্রতা লিটন আলী। তিনি জানান,তার মেয়ের কারণেই তিনি আজ নতুন ঘর সহ বাড়ী পাচ্ছেন।
এর আগে গত ১৫ ফ্রেরুয়ারি“সাফ ফুটবলের সাগরিকা থাকেন অন্যের জমিতে“ শিরোনামে মুক্তির ৭১ নিউজ ডট কম সহ দেশের কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়।
জানা গেছে, সাগরিকার বাবার চায়ের দোকানের আয়ে চলে তাদের সংসার। অন্যের জমিতে তোলা ছোট্ট সেই জরাজীর্ণ ঘরে কীভাবে বসতে দেবেন, তাই সাগরিকা তার বন্ধুদের বাড়ি আনার আবদারে সায় মিলছে না তাঁর মায়ের। রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামের বাড়িতে এই প্রতিবেদকের কথা হয় সাগরিকার বাবা-মায়ের সঙ্গে। কথা হয় তাঁদের একাধিক প্রতিবেশীর সঙ্গেও।
সরেজমিনে গিয়ে তাঁদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে নানা বিষয় জানা যায়। বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরের চায়ের দোকানটি মূলত সাগরিকার বাবা মোহাম্মদ লিটন আলী ও মা আনজু আরা বেগম মিলেই পরিচালনা করেন। বাশরাইল গ্রামের মহাসড়কের পাশে ওই চায়ের দোকান তাঁদের।
রাণীশংকৈল-হরিপুর মহাসড়কের বাশরাইল এলাকা থেকে মহাসড়কের উত্তর দিক দিয়ে সরু পথ ধরে প্রায় আধা কিলোমিটার যেতেই সাগরিকার বাড়ি। বাড়ির প্রবেশপথে ছোট একটি দরজা। বাড়িটি কাশবনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। ঘর দুটি করা হয়েছে কাশবন আর বাঁশের বাতার বেড়া দিয়ে। ঘরের ছাউনি হিসেবে রয়েছে ছাপড়া টিন। বাড়িতে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল। সাগরিকার বাবা-মা জানান, টাকার অভাবে স্বাস্থ্যসম্মত টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন নির্মাণ করতে পারছেন না তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব আলী ও সোহেল রানা বলেন, ‘সাগরিকারা অত্যন্ত গরিব। তাঁরা খুব কষ্ট করে দিনাতিপাত করছেন। অন্যের জমিতে কোনো রকমে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন। সাগরিকার জন্য আজ আমাদের গ্রাম রাঙ্গাটুঙ্গি সারা দেশে পরিচিতি পেয়েছে। সাগরিকা আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, দেশের সম্পদ। সরকার যদি সাগরিকার পরিবারের পাশে দাঁড়ায়, তাঁদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ায়, তাহলে সাগরিকার মতো অনেকে ভালো খেলোয়াড় হওয়ার উৎসাহ পাবেন।’
সাগরিকার বাবা লিটন আলী বলেন, উকিল নামের এক ব্যক্তির এ জমির কোনো দাবিদার না থাকায় তাঁরা সেখানে বাড়ি বানিয়ে থাকছেন। অর্থের অভাবে জমি কিনতে পারছেন না। তাই সেভাবে বাড়িও বানাতে পারছেন না। সাগরিকার মা আনজু আরা বেগম বলেন, তাঁর মেয়ে সাগরিকা যে পরিবেশে এখন থাকছে, সেই পরিবেশ তো আর তাঁদের বাড়িতে নেই। মেয়ে এলে কোথায় কীভাবে থাকতে দেবেন তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে বন্ধুদের নিয়ে বাড়ি আসতে চান। কিন্তু তিনি নিষেধ করেন। সাগরিকার বন্ধুরা এলে কোথায় বসতে দেবেন, কোথায় থাকতে দেবেন, তাই তিনি তাদের আসতে বারণ করেন। কোন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে জমি কেনার চেষ্টা করছেন। কিন্ত সেটা কখনও সম্ভব হয়নি।
মুক্তির ৭১/নিউজ /আনোয়ার