মোহাম্মদ শাহিদ আজিজ:
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে একটি কুচক্রী মহল।
সেই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী।
সারাবিশ্বে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালন করবে দিনটি।
জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল মুক্তির ৭১ নিউজ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক মোহাম্মদ শাহিদ আজিজ বাঙালি জাতির এই শোক দিবস উপলক্ষে বাণী প্রদান করেছেন।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যারা ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর সাথে শাহাদাত বরণ করেন।
মোহাম্মদ শাহিদ আজিজ বলেন, “১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের এদিনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমন্ডির ৩২ এর নিজ বাসভবনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ অনেক নিকট আত্মীয়। এমন ঘটনা কেবল দেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। আমি শোকাহত চিত্তে তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা মহান স্বাধীনতার রূপকার। ১৯৪৮ সালে ভাষার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বসহ ১৯৫২ এর মহান ভাষা আন্দোলন ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ’৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২ শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬-দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ’৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাঁকে বারবার কারাবরণ করতে হয়।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর এক স্মৃতিচারণে বলেন, "ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে সিঁড়ির উপর লুকিয়ে পড়লেন আব্বা। আমার মা সিড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘাতকের দল ততক্ষণে ওপরে উঠে এসেছে। আমার মাকে তারা বাধা দিল এবং বললো যে আপনি আমাদের সঙ্গে চলেন। মা বললেন : আমি এক পা-ও নড়বো না, কোথাও যাবো না। তোমরা উনাকে মারলে কেন ? আমাকেও মেরে ফেলো। ঘাতকদের হাতের অস্ত্র গর্জে উঠলো। আমার মা লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে।"
শেখ হাসিনা লেখেন, " কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল ও জামালের স্ত্রী রোজী জামাল মা’র ঘরে ছিল। সেখানেই তাঁদের গুলি করে হত্যা করে ঘাতকেরা। রাসেলকে রমা জড়িয়ে ধরে এক কোণে দাঁড়িয়েছিল। ছোট্ট রাসেল কিছুই বুঝতে পারছে না। একজন সৈনিক রাসেল আর রমাকে ধরে নিচের তলায় নিয়ে যায়। একইসঙ্গে বাড়িতে আরও যারা ছিল তাদেরও নিচে নিয়ে দাঁড় করায়। "
এর থেকে নৃশংস এবং হৃদয় বিদারক ঘটনা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। ফাঁসির মঞ্চেও তিনি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এই মহান নেতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আজ অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে। ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতির পিতার নাম এ দেশের লাখো-কোটি বাঙালির অন্তরে চির অমলিন, অক্ষয় হয়ে থাকবে।
ইতিহাসও কাউকে ছাড় দেয় না। বঙ্গবন্ধুর কন্যা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। যারা জীবনেও কল্পনা করেনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের এ মাটিতে বিচার করা যাবে না, তারা দেখেছে কিভাবে বিচার হয়েছে। আর যারা পালিয়ে আছে তাদের ফিরিয়ে আনার জোর চেষ্টা চলছে। বঙ্গবন্ধুর বিচারের ধারাবাহিকতায় জাতীয় চার নেতার বিচার সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিচার কাজ প্রায় শেষের দিকে।
লেখক : মোহাম্মদ শাহিদ আজিজ
প্রকাশক ও সম্পাদক
মুক্তির ৭১ নিউজ ডট কম