ভারতীয় ভিসা সমস্যায় প্রতিবাদ করলেই বিপদ-আবেদনেও চরম ভোগান্তি


ভারতীয় ভিসা পেতে চরম ভোগান্তি

১৫ জুলাই ২০২৪ ইং
রাজশাহী প্রতিনিধি


রাজশাহী প্রতিনিধি:


ভিসা পাওয়া তো পরের কথা, ভারতীয় ভিসা'র আবেদন জমা দিতেই চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভিসা প্রত্যাশীদের। এমন দুর্ভোগ শুরু হয়েছে প্রায় ৮ মাস যাবত। দেশের অন্য কোন বিভাগে ভিসা আবেদন জমা দিতে সময় না লাগলেও রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ভারতীয় ভিসা'র আবেদন জমা দিতে সময় লাগছে ২-৩ মাস। তবে এমপি, মন্ত্রী ও সিটি মেয়রের সুপারিশ (ডিঅ লেটার) পেলে মিলবে দ্রুত জমা দেওয়ার সুযোগ। আবার এমন ভোগান্তির ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করলে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় ভিসা নিয়ে কেউ মন্তব্য করলেই পড়তে হচ্ছে পুলিশি হয়রানিতে। এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যাও এখন অনেক। অপর দিকে ব্যবসায়ীদের শায়েস্তা করতেও পাতা হচ্ছে নানা ফাঁদ। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো। 

(ঘটনা-১) চলতি বছরের জানুয়ারিতে রংপুরের জাহাঙ্গীর নামের একজন ভিসা প্রসেসিং এর দোকানদার, তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ভারতীয় ভিসা নিয়ে ৯.২৪ মিনিটের লাইভ প্রচার করে। সেই লাইভে তিনি বলেন, বর্তমান ভারতীয় সহকারি হাই কমিশনারের কাছে উত্তরবঙ্গের মানুষ, মানুষ না!! তিনি উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রতি অমানবিক ভূমিকা রাখছেন । আমি একজনের জন্য ভিসা আবেদন প্রসেস করেছি, সেখানে জমা দেওয়ার ডেট (তারিখ) পড়েছে এপ্রিল মাসে। এর আগে একজনের ভিসা'র আবেদন করেছি, সে মারাই গেছে। তার আবেদন জমা দেওয়ার সুযোগ হয়নি। এভাবে তিনি ভারতীয় হাই কমিশন নিয়ে অনেক কথা তুলে ধরেন। লাইভটি প্রচারের পর তিনি পুলিশের ভয়ে পালিয়ে ছিলেন। কারন, তাকে পুলিশ খুঁজছে বলে তার শুভাকাঙ্খিরা জানায়। এরপর সে তার আইডি থেকে সেই ভিডিও ডিলিট করে ও ক্ষমা প্রার্থনা করে রেহাই পাই সেই যাত্রায়। সেই ব্যক্তির স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দি মিডিয়ার কাছে সংরক্ষিত। 

(ঘটনা-২) গত বছরের ৩ জুলাই রাজশাহীর একটি ভিসা প্রসেসিং এর মহিলা ব্যবসায়ীকে হাজতে যেতে হয়েছে। তার অপরাধ, সঠিক সময়ে ভিসা আবেদন ফি অনলাইনে জমা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সেই ভিসা প্রত্যাশীকে দিয়ে জোর পূর্বক নগরীর বোয়ালিয়া থানায় ঐ নারী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করাতে বাধ্য হন। তা নাহলে  তার আবেদনটি জমা নেওয়া হবেনা বলে ভয়ভীতি দেখায় ভারতীয় ভিসা সেন্টারের বর্তমান ইনচার্জ। পরবর্তীতে অভিযোগকারি তার অভিযোগ প্রত্যাখান করলেও হাই কমিশনের রোষানলের রেহায় পায়নি সেই নারী। পরে অলৌকিক ইশারায় থানা পুলিশ সেই নারীকে প্রতারক আখ্যা দিয়ে মামলা দেয়। সেই মহিলা এক থেকে দেড় মাস হাজত খেটে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

(ঘটনা-৩) গত ৫ জুলাই জুবাইর হক নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভারতীয় ভিসার ভোগান্তি নিয়ে গ্রুপে একটি স্ট্যটাস দেয়। এরপর শুরু হয় তাকে খোঁজাখুঁজি। অবশেষে ৭জুলাই সেই স্ট্যাটাস দাতা ও গ্রুপের এডমিন আমিন রায়হান বাপ্পি কে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যায় রাজশাহীস্থ ভারতীয় হাই কমিশন অফিসে। সেখানে তাদের ক্ষমা চাইয়ে, মুচলেকা নেওয়া হয়। এবং তাদের বলা হয় এই গ্রুপের নাম চেঞ্জ করতে। পরে সেই গ্রুপটিতে আবারও ক্ষমা প্রার্থনা করে আরেকটি স্ট্যাটাস দিলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তার জবানবন্দি সংরক্ষিত রয়েছে। 

(ঘটনা-৪) ২২ সালে ভারতীয় ভিসার অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর বর্তমান সহকারি হাই কমিশনার যোগদানের পর সেই প্রতিবেদককেও হয়রানি করার চেষ্টা করা হয়। বর্তমান রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারি হাই কমিশনার পুলিশের নিকট প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে। পরে ঘটনার সত্যতা না পেয়ে পুলিশ প্রতিবেদকের কাছে দূঃখ প্রকাশ করে। সহকারি হাই কমিশনের এমন কার্যক্রমে হতাশ পুরো উত্তরবঙ্গের মানুষ। 

এব্যাপারে জনসাধরণের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আগে ভারতীয় ভিসা পেতে সমস্যা হতো না। আগে লাইনে দাঁড়িয়ে হলেও আবেদনটি জমা দিতে পারতাম। কিন্তু বর্তমানে সেই সুযোগ আর নাই। তবে দেশের অন্যন্য বিভাগে এরকম সমস্যা নাই। অনলাইনে আবেদন পুরণ করলেই, পরের দিন  গিয়ে জমা দেওয়া যাচ্ছে। আর কেউ মুখ খুললেই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা খুব খারাপ হচ্ছে। মানুষ কি তার সমস্যার কথা প্রকাশ করতে পারবে না? আর বাংলাদেশ পুলিশ কার হয়ে কাজ করছে?  বাংলাদেশ সরকারের নাকি ভারতীয় হাই কমিশনের? 


গত ৫ তারিখের ঘটনার ব্যাপারে বোয়ালিয়া থানা নিয়ন্ত্রিত উপশহর ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই সোহেল রানা'র সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এখানে আমার কিছু করার নাই। আমাকে ওসি স্যার নির্দেশ দিয়েছে তাই আমি করেছি। কেউ অভিযোগ দিলে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে থানায় নেওয়ার কথা, কিন্তু ইন্ডিয়ান হাই কমিশনে  নিয়ে গেলেন কেন? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটি উপর মহলের নির্দেশে করা হয়েছে। 


এব্যাপারে কথা বলতে ভারতীয় সহকারি হাই কমিশনার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হুয়াটস এ্যাপের মাধ্যমে সমস্যা গুলোর ব্যাপারে ম্যাসেজ করলে, তিনি ম্যাসেজ সিন করলেও কোন উত্তর দেননি।


মুক্তির ৭১/ নিউজ/ সমিত