রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাত দিন এক করে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার যখন রাজশাহী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখা। ঠিক তখন উদ্ধার অভিযানে বড় বাধা হচ্ছে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। এদিকে প্রশাসনকে নদী পারাপারে সহযোগিতা করায়, মাদক ব্যবসায়ীর মিথ্যা মামলায় জেল হাজতে যেতে হয়েছে ঘাটের মাঝিকে। ২৬ জানুয়ারির একটি কাল্পনিক ঘটনার সাজিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারী প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হাজির হয়ে অভিযোগ করেন ডজন খানেক মাদক মামলার আসামী রাশিদুল ইসলাম ওরফে বাবু (৩৫)। বাবুর এমন তথাকথিত অভিযোগটি যাচাই না করে ১৪৩/১৪১/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৩২৫/৩৮৬/৫০৬ ধারায় এজাহারভুক্ত করেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)। যার মামলা নাম্বার ২৭। বাবু গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুর মাদ্রাসা মোড় এলাকার রশিদ কানাই এর ছেলে। বাবুর সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় খালুর নিকট গরু কেনার উদ্দেশ্য যাচ্ছিলেন আষাড়িয়া দহ চরে অর্থাৎ নদীর ঐ পারে। হঠাৎ নদীর মাঝপথে তাকে মারধর করে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা জোর জবস্তি কেড়ে নেয় নৌকার মাঝি নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু মাঝিসহ কয়েকজন। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারী মামলার ২ নং আসামী নুরু মাঝিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আবার ২০ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত অফিসারকে বাদ দিয়ে নিজেই কোর্টের হাজির হয়ে রিমান্ড আবেদন করেছেন থানার ওসি আব্দুল মতিন। অপরদিকে মামলার এজাহার নামীয় বাদীর মানিত সাক্ষি বলছে, (বাদীর খালু) আমি বিষয়টি কিছুই জানিনা। বাবুর সাথে আমার কোন ধরনের যোগাযোগ নাই। ঘটনার দিনেও আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি কেউ। ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে এমন বক্তব্য রেকর্ড করে মামলার এজাহার নামীয় দুইজন সাক্ষী স্বশরীরে হাজির হয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে মামলায় দেওয়া বয়ানে অনেক প্রশ্ন থেকে যায়, মারধর করলে মেডিকেল সার্টিফিকেট কই? সে দিনে গরু কিনতে না গিয়ে রাতে কেন? ঘটনার ২০ দিন পরে মামলা করলো কেন? এদিকে তার এমন উদ্ভট বিবরণের সত্যতা যাচাই না করে কেনইবা মামলায় রূপ দিলেন ওসি আব্দুল মতিন? আসলে ঘটনাটি সত্য, নাকি মাঝিদের শায়েস্তা করার অপকৌশল? এমন অসংখ্য প্রশ্ন আবিষ্কার হচ্ছে জনমনে।
সকল রহস্যের জাল অনুসন্ধানে ততপর মিডিয়াকর্মীরা। ইতমধ্যে মিডিয়াকর্মীর হাতে এসেছে মামলার বাদী রাশিদুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা। অভিযোগ উঠেছে এই বাবু থানার সাথে আতাত করে দিদার্সে ব্যবসা করছেন। বাবুর বিরুদ্ধে ২১ সালের ৮ এপ্রিল মাদকের মামলা। মামলা নং ১৫/১১৪। ২৩ সালের ২১ মে মাদকের মামলা। মামলা নং ৪৯। ১০ সালের ১০ জুন মাদকের মামলা। মামলা নং ১৫। ১৪ সালের ১২ আগষ্ট চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মারামারির মামলা। মামলা নং ২৬০/১৪ জিআর। ২১ সালের ১৮ জানুয়ারী নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা। মামলা নং ৫/২১। এরকম অসংখ্য মামলা রয়েছে এই বাবুর বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মতিনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, মামলা হয়েছে, একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরনো ঘটনার অভিযোগ মামলা রেকর্ডের পূর্বে তদন্ত সাপেক্ষে নেওয়া হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি জানান, মামলার আগে তদন্ত করার কোন সুযোগ নাই। ওসি'র এমন বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, যে কেউ অভিযোগ দিলে তিনি মামলায় রূপ দেন? মামলা ও আসামী নুরু'র বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নুরু মাঝি ঘটনার দিনেও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাথে অভিযানে ছিলেন। পরে নুরু মাঝিকে গ্রেফতারের দিন ডিবি ও থানা পুলিশের সাথে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানা যায়।
এদিকে ওসি'র বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে স্থানীয়রা। তাদের দাবী, মাদক ব্যবসায়ীদের দিনের বেলা হুমকি ধামকি দিচ্ছে রাতের বেলা এক সাথে চা খাচ্ছে! আশ্চর্যের বিষয় হলো, এর আগে নুরু মাঝির ছোট ভাই নাঈম হোসেনকে ধরে ছেড়ে দেয় ফাঁড়ি পুলিশ। সেদিন টাকা দিবে মর্মে ছাড়া হয়েছিল। টাকা না দেওয়ায় ১৬ ফেব্রুয়ারীর মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে ভুক্তভুগীদের দাবী। অনুসন্ধান চলমান..
মুক্তির ৭১/নিউজ/সমিত