মৃত ব্যক্তির কবরে হামলা, এলাকাবাসীর ক্ষোভ


দিনাজপুরের খানসামায় মৃত ব্যক্তির একটি কবরে লাথি-গুড়ি ও প্রসাব করে কলেজ ছাত্র।

০৬ জুলাই ২০২৪ ইং
দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরপ্রতিনিধি:


দীর্ঘদিন ধরেই জমি জায়গাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারিবারিক কলহের জেরে মৃত ব্যক্তির কবরে লাথি-গুড়ি ও প্রসাব করার অভিযোগ উঠেছে এক কলেজ ছাত্রের বিরুদ্ধে।


ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সাড়ে ৪ ঘটিকায় দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের নেউলা গ্রামের গণি হাজীপাড়ার একটি পারিবারিক কবরস্থানে ঘটে।


জানা যায়, মরহুম ফয়মদ্দিন শাহ গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। তার কবরে গিয়ে ওই এলাকার মো. ওবাইদুল ইসলামের ছেলে পাকেরহাট বি.এম কলেজের মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্র আরাফাত রহমান (১৯) এলোপাথাড়ি লাথি-গুড়ি ও প্রসাব করে। এ নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।


এ ঘটনায় মরহুম ফয়মদ্দিন শাহের ছেলে মো. জাকিরুল ইসলাম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।


অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আরাফাত ও তার পরিবার পাড়া-প্রতিবেশী ও একই বংশীয় লোকজন। তাদের সাথে দীর্ঘদিন সামাজিক পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। তারা বিভিন্ন সময় আমার ও আমার পরিবারের লোকজনের ক্ষতিসাধনের পায়তারা খুঁজে আসছে। তারা দলবদ্ধ হয়ে পৈত্রিক ভিটার পারিবারিক কবরস্থানে থাকা আমার মরহুম পিতা ফয়মদ্দিন শাহের কররের সামনে এসে আমার মরহুম পিতাসহ আমার পরিবারের লোকজনকে অহেতুক ভাবে গালিগালাজ করতে থাকে।

আরাফাতের পরিবারের হুকুমে আরাফাত আমার পিতার কবরের উপর এলোপাথারী ভাবে লাথি-গুড়ি মারতে থাকে তার পরিবারের নিদের্শক্রমে আমার পিতার কররের উপবে প্রশাব করে দেয়।


এলাকাবাসী সোহাগ ইসলাম বলেন, আরাফাতের এমন জঘন্যতম কাজের জন্য দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি। কেননা সে অন্য মানুষের কবরে গিয়েও এমন কাজ করতে পারে। আমি একজন মুসলমান হিসেবে এটা মেনে নিতে পারছি না।


আরেক এলাকাবাসী স্বাধীন বলেন, আমি অনেক চিল্লাচিল্লি শুনতে পাই। গিয়ে দেখি আরাফাত ও তার বাবা অনেক চিৎকার করছে। এর এক পর্যায়ে আরাফাত কবরে গিয়ে লাথি মারতে থাকে এবং প্রসাব করে। আমি এদের বিচার চাই।


রশিদা বেগম নামে এক মহিলা বলেন, ছেলেটা (আরাফাত) কবরে ঝাঁপ দিয়ে মরহুম ব্যক্তির মুখ বরাবর লাথি মারে। সে খুবই লাথি মারছে। আমি মহিলা মানুষ তাই কবরে গিয়ে দেখতে পারি নাই।


মরহুমের ছেলে জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি এসে দেখি পরিবেশ খুব উত্তপ্ত। আরাফাত ও তার বাবা কবরস্থানে এসে ভাঙচুর করেছে। আরাফাতের সঙ্গে ছিল তার দাদা ফয়জার হাজী।  আমি তাদের বাধা দিলে গেলে, লাগে বিপত্তি। এর এক পর্যায়ে আমাকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তারা বলে আমার বাবার লাশ উঠিয়ে তার শরীরে থাকা হাড়গুলো জ্বালিয়ে দিবে। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।


এলাকাবাসী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি সোরগোল শুনে ছুটে আসি, এসে দেখি আরাফাত ইসলাম কবরে প্রসাব করতেছে এবং জোরে জোরে লাথি দিচ্ছে। দেওয়ার পর বলতেছে এর হাড্ডি আর মাংস সব আগুনে পুড়ায় দিবো। আমরা একটা মামলায় সাক্ষী আছি, তাদের মামলাটায় এদের পক্ষে দেই না বলে। হাফিজ উদ্দিন শাহ নেতৃত্বে‌ আমাদের উপর নির্যাতন করে।


এই বিষয়ে আরাফাতের সঙ্গে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার বাবা ফোন রিসিভ করে। তিনি বলেন, আরাফাতের নিজস্ব কোন নাম্বার নেই। সে বাসায় নেই, কলেজে গেছে।


এই বিষয়ে অভিযুক্ত আরাফাতের বাবা মো. ওবাইদুল ইসলাম বলেন, আমার একটি জমি তারা বেদখল করে। এই বেদখলের কারনে তাদের নামে থানায় একটি অভিযোগ দেই। এই অভিযোগে তাদের নাম দেওয়ার কারনে তারা আমাকে আটকে বেঁধে রাখে। আটকের খবরে আমার ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করতে যায়। এরপর আমার ছেলেকে ধাওয়া করে। সে এক সময় প্রানের ভয়ে কবরে লুকায়। কবর স্থানে লুকানোর কারনে তারা মিথ্যা বিভ্রান্তি ছড়ায়। আসলে আমার ছেলে কবরে কোন লাথি ও প্রসাব করে নাই।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, আমি ছুটিতে আছি। গিয়ে অভিযোগটি দেখবো। সত্য মিথ্যা যাচাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


মুক্তির ৭১/নিউজ /আজিজার