৩৩ বছরেও স্থায়ী হয়নি পরিছন্ন কর্মী মতিয়ারের চাকরি ; কাটছে মানবেতর জীবন


পরিছন্ন কর্মী মতিয়ার

২৮ মে ২০২৩ ইং
চারঘাট প্রতিনিধি



চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি:


রাজশাহীর চারঘাটে দীর্ঘ ৩৩ বছরের মাস্টার রোলে চাকরির জীবন অতিবাহিত হলেও এখনো  হয়নি পরিছন্ন কর্মী মতিয়ারের  চাকরি স্থায়ীকরন। সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন মতিয়ার রহমান। তার বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পৌর এলাকার থানা পাড়া গ্রামে।  মৃত আ: আজিজ খলিফার বড় ছেলে সে।



মতিয়ার ১৯৯০ সালে উপজেলার চারঘাট খাদ্য গোডাউন ( এলএসডি) তে পরিছন্ন্ কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন।  তারপর থেকে এখনো সুনামের সাথে কাজ করে চলেছে মতিয়ার। মজুরি হিসেবে আগে সামান্য কিছু টাকা পেলেও বর্তমানে ৫০০ টাকা হাজিরা পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে।  বর্তমানে দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি এমনঅবস্থায় পরিবারের খরচ যোগান দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তার।




মতিয়ার সরকারি চাকরির জন্য ২০০৮ সালে খাদ্য বিভাগে দারোয়ান পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন। এরপরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ  হয়েও চাকরি  নিয়োগ দেয়া হয়নি তাকে। জানা গেছে, মাস্টার রোলে কর্মরত মতিয়ার রহমান, যুগের পর যুগ সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে চারঘাট এলএসডিতে কাজ করেন যাচ্ছেন।



তার পরিবারে মোট ৬ জন সদস্যের মুখে দুবেলা দু মুঠো খাবার তুলে দিতে জীবনযুদ্ধের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। 



পরিছন্ন কর্মীর কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় অবহেলা ও লাঞ্চনার সিকার হতে হয়েছে মতিয়ারকে  উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট। তবুও পরিবারের কথা চিন্তা করে সে  নিরবে এখনো জীবনযুদ্ধের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।



তার বড় ছেলে মেহেদি হাসান ইন্টার পাশ করার পর অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারে নি ডিগ্রি কলেজে। সেই কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ৩৩ বছরের চাকরির জীবনে কস্টের জীবন সংগ্রামে বৃদ্ধ মায়ের সুচিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। দুু:খের শুনে চারঘাট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্যার আমাকে ৩ হাজার টাকা দেন মায়ের সুচিকিৎসার জন্য।



মতিয়ার বলেন, গত এপ্রিল মাসে রাজশাহীর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফারুক আহমেদ স্যার চারঘাট ওসিএলএসডির মারফত তার অফিসে ডাকেন। পরে অফিসে গিয়ে অনুমতি নিয়ে  ফারুক আহমেদ স্যারের সামনে গিয়ে ছালাম দিতেই ওসিএলএসডির সামনে আমার পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় জানার পরে অকক্ট্য ভাষায় গালাগালি শুরু করেন স্যার। এবং আমাকে অফিস থেকে বের করে দেন।   



মতিয়ার বলেন, আমি ছোট চাকরি  এটাই আমার অপরাধ। তিনি আরো বলেন, গত ২১ মে  সুইডেন দূতাবাসের রাষ্ট্রদুত রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার দাতা প্রতিষ্ঠান সোয়ালজ পরিদর্শনে আসেন। কথার মাঝে পরিচয় হয় তাদের সাথে।  



আমাকে প্রশ্ন করেন কি কাজ করেন,  পরে তাদের সাথে আলাপকালে আমার জীবনের ঘটে যাওয়া দু:খের কাহিনী বলি।  আমার দু:খের কথা  শুনে আবেগ আপ্লুত হন তারা। পরে তারা যে কোন প্রয়োজনে তাদের সাথে  যোগাযোগ করতে বলেন। পরিছন্ন কর্মী মতিয়ার বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে আমার আকুল আবেদন দীর্ঘ ৩৩ বছরের একই দপ্তরে কাজের জীবন অতিবাহিত করছি। বাকিটা জীবন যেন পরিবারকে নিয়ে একটু ভাল ভাবে চলতে পারি খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে সেই সুদৃষ্টি কামনা করছি।



মুক্তির ৭১ /নিউজ /সমিত