আবদুল্লাহ আল মামুন:
মেয়েটির নাম তায়্যিবা, বয়স ৮ বছর। সুন্দর ফুটফুটে চেহেরা। এই বয়সে তার পড়ার কথা স্কুলে ও খেলাধুলা করে মাতিয়ে রাখার কথা পুরো এলাকা। কিন্তু একটি জটিল রোগ বাসা বেধেঁছে তার শরীরে। দিন রাত ২৪ঘন্টা হাত-পা বেধেঁ রাখতে হয়। কেননা জটিল রোগের কারণে নিজেই নিজের মুখে সজোরে আঘাত করতে থাকে। পায়ের বাঁধন খুলে দিলে এদিক -সেদিক দৌড়ে ছুটে যায়। নিজে হাতে খাবার খেতে পারে না। খাবার মুখে তুলে দিলে, না চিবিয়ে গিলে খায়। এই বাঁধন অবস্থায়ই সে পায়খানা প্রশ্রাব করে। সাথে সাথে পরিস্কার করা না হলে তা খেয়ে ফেলে। রাতে ঘুমানোর সময়ও বিছানার পাশে বেঁধে রাখতে হয়। বেশিক্ষণ না ঘুমিয়ে এপাশ উপাশ করে।
তায়িবার বাড়ি নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলা ঘাগড়া ইউনিয়নের লেটিরকান্দা গ্রামে। বাবা মাহফুজুর রহমান নয়ন পেশায় একজন দিন মজুর। তিনিও পা এবং কোমরে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোমরে বেল্ট লাগিয়ে বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। মেয়েকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে হয় বিধায় মা আঁখি বেগমও কাজে যেতে পারেন না। আর্থিক অনটনের কারনে মেয়ের উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।
১৪ মে (রবিবার) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির কোণে একটি চেয়ারে বসে আছে তায়িবা। হাতেপায়ে কাপড় দিয়ে বাঁধা। একদিকে তাকিয়ে আপন মনে কি যেন ভাবছে। এ সময় তার হাতের বাঁধন খুলে দেওয়ার কথা বললে তার মা এসে হাতের বাঁধন খোলে দেন। সাথে সাথেই সে দুই হাতে মুখের দুই পাশে থুথুনির নীচে সজোরে আঘাত করতে থাকে। যা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। তারপর আবার তার দুই হাত বেঁধে ফেলা হয়। পায়ের বাঁধন খুলে দিলে সবার অজান্তে সে অনেক দূরে ছুটে চলে যায়। পরে লোকজন বাড়ীতে দিয়ে যায়। এভাবেই চলছে শিশু তায়িবার বন্দী জীবন।
দিনমুজুর বাবা মাহফুজুর রহমান নয়ন জানান, অভাব অনটনের সংসার তাদের। বাড়ি ভিটি ছাড়া তাদের কোন জমিজমা নেই। বাবার ভিটিতে বড় ভাইয়ের তোলে দেওয়া চালা ঘরে তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। অভাবের তাড়নায় নিজের কোমরে ও পায়ে জটিল রোগ নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এমন অবস্থায় একমাত্র মেয়ে এমন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। তিনি আরও জানান, ইতি পূর্বে অনেক কষ্ট করে টাকা মিলিয়ে কিছু চিকিৎসা করানো হলেও অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারেননি। চোখের সামনে শিশু কন্যার এমন যন্ত্রনাদায়ক আচরণ দেখে সহ্য করতে পারেন না। তাই তিনি মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তশালীদের প্রতি আহবান জানান।
তার মা আঁখি আক্তার জানান, মেয়েকে সারাক্ষণ এভাবে বেঁধে রাখেন। জন্মের ৩ বছর পর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে তায়িবা। হাতের বাঁধন খুলে দিলেই দুই হাতে নিজের মুখে সজোরে আঘাত করতে থাকে। তাছাড়া হাতের কাছে কিছু থাকলে তা দিয়েও আঘাত করতে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিউজ্জামান রনি, নবী নেওয়াজ খান জানান, নয়নের পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র এবং নয়ন নিজেও অসুস্থ। তাদের শিশু সন্তান তায়িবাকে প্রায় ৩/৪বছর যাবত হাতপায়ে বেঁধে রাখতে দেখছেন। মেয়েটি অদ্ভুদ এক জটিল রোগে আক্রান্ত। তারা আশা করেন উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে মেয়েটি সুস্থ হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। শিশুটি যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ শাহিদ আজিজ
৪৪৮ বাউনিয়া,তুরাগ,ওয়ার্ড নং ৫২
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ঢাকা থেকে প্রচারিত এবং প্রকাশিত।
যোগাযোগ -০১৭৯৫২৫২১৪২
ইমেইল -shahidazizmoonna@gmail.com